আজ রবিবার ১৯শে চৈত্র, ১৪২৯, ২রা এপ্রিল ২০২৩

||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ১২, ২০২০, ৪:২১ অপরাহ্ণ




বড়শির ছিপ তৈরির গ্রাম লামাপাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাড়ির উঠানে রাখা সারি সারি বাঁশের কঞ্চি। তার পাশেই দা নিয়ে বসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। গল্প করতে করতে দা দিয়ে বাঁশের কঞ্চি কেটে মসৃণ করছেন তারা। এরপর মসৃণ কঞ্চিগুলো রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করছেন মাছ বড়শির ছিপ।

সম্প্রতি ছিপ তৈরির এই দৃশ্য ধরা পড়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মইলাকান্দা ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামে।

উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত লামাপাড়া গ্রামটি বড়শির ছিপ তৈরির জন্য বিখ্যাত। আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা গ্রামের অর্ধশত পরিবার এই পেশায় এসে নিজেদের ভাগ্যবদল করেছে। সংসারে ফিরেয়ে এনেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।

সরজমিনে লামাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রত্যেকটি বাড়ির উঠানে চলছে ছিপ তৈরির কাজ। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সংসারের কাজের পাশাপাশি ছিপ তৈরি করেন। বর্ষা মওসুমে ছিপের চাহিদা থাকে অনেক। তাই এখন থেকেই ছিপ তৈরি করে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করছেন কারিগররা।

 

ছিপ তৈরির জন্য নেত্রকোনার দূর্গাপুর থেকে বাঁশের কঞ্চি সংগ্রহ করেন কারিগররা। এরপর সেই কঞ্চি ছিপের মাপ মতো কেটে দা দিয়ে মসৃণ করে রোদে শুকানো হয়। এরপর কয়লার আগুনে পুড়িয়ে ও ছ্যাকা দিয়ে কঞ্চিগুলো সোজা করে বড়শির ছিপ তৈরি করা হয়।

ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেটসহ ভাটি অঞ্চলের নদী, নালা, খাল-বিল ও পুকুরে মাছ ধরার জন্য ছিপের চাহিদা অনেক। সেই চাহিদা পূরণের লক্ষে লামাপাড়া গ্রামে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি ছিপ তৈরি করা হয় বিক্রির জন্য। শৌখিন মৎস্য শিকারি ও পাইকাররা এখান থেকে ছিপ কিনে নিয়ে যান। পাশাপাশি স্থানীয় হাট-বাজারেও বিক্রি হয়।

ছিপ তৈরির কারিগর জালাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি বাঁশের কঞ্চির ১০ টাকা দরে কিনে আনা হয়। এরপর কঞ্চি মাপ মতো কেটে বিভিন্ন আকারের ছিপ তৈরি হয়। ছোট ছিপ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি ছিপ ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও বড়ছিপ ২০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। তবে পাইকারি দাম আরো কম।

কয়েক যুগ ধরে এই গ্রামের পুরুষদের রোজগারের পাশাপাশি নারীরাও ছিপ তৈরি করে আর্থিক উন্নয়ন করছে। খড়ের ঘরগুলো এখন টিনশেড ও আধাপাকা হয়ে গেছে। গ্রামে এখন অভাবী মানুষ নেই বললেই চলে। প্রায় প্রতিটি পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই স্কুলে যায়।

কারিগর আবুল হাসিম বলেন, ‘ছিপ তৈরি করে আমাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। ছিপ বিক্রির টাকায় সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি দুই ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি।’

রহিমা বেগম বলেন, ‘আগে খড়ের ঘরে থাকতাম। কিন্তু এখন ছিপ বিক্রির টাকায় আধাপাকা বাড়ি করেছি। কৃষি কাজের পাশাপাশি ছিপ তৈরি করে এখন আমি পরিবার নিয়ে সুখী।’

গত দুই যুগে লামাপাড়া গ্রামের ছিপের খবর ছড়িয়ে পড়েছে দেশের নানা প্রান্তে। মৎস্য শিকারিদের বিশ্বাস এই গ্রামের তৈরি ছিপে মাছ বেশি ধরা পড়ে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে মুখরোচক গল্পও।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০