ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদির এবার ‘গুরু পুজান’ পদকে ভূষিত হন। দেশে গ্রামীণ এলাকায় চোখের চিকিৎসায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের বিলাসপুরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া অফথালমোজিক্যাল সোসাইটি (অওঙঝ)-এর সম্মেলনে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর/২৩) ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কৃতি সন্তান এ পদক গ্রহণ করেন। তিনি চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০সনে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ও অর্জন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া অফথালমোজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ড. হারবানশ লাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশান অফ কমিউনিটি অফথোলমোলজিস্ট অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ডা. এল.সি মাদারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সঞ্জয় মেহতা, অফথ্যালমোজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশের সভাপতি এএইচএম এনায়েত হোসেন। অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভুটান ও বিভিন্ন দেশের ৫শতাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ অংশ গ্রহণ করেন। এরমধ্যে বাংলাদেশের রয়েছেন প্রায় ৫০জন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদিরের বিনামূল্যে এ চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য তিনি ২০১৬সালের ২২অক্টোবর ভারতের তিরুচিরাপল্লীতে এ্যাসোসিয়েশন অফ কমিউনিটি অফথ্যালমলোজি ইন ইন্ডিয়া আয়োজিত অনুষ্ঠানে লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, চক্ষু চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ্যাওয়ার্ড, ২০০২সালে লায়ন্স এফ্রিসিওয়ান এ্যাওয়ার্ড, ২০০৫সালে এএফএও কর্তৃক ডিসটিংগোয়িং সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড, একেদাস এ্যান্ডওমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, ২০১৫সালে ভারতে গোল্ডমেডেলসহ দেশ ও বিদেশে ১৯টি এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
তিনি ও তার সহধর্মীনী অধ্যাপিকা ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগিতায় নিজ জন্মভূমিতে ২০০৪সনে গড়ে তোলেন ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল। তাঁরই অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলা হাসপাতালটিতেও ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। তিনি ১৯৭৭সন থেকে ২০০৩ইং সন পর্যন্ত গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ক্যাম্পে ৯হাজার ৫শ ৩৫জনের অপারেশন সম্পন্ন করেন। এই হাসপাতালে ১৯ বছরে বিনামূল্যে চোখের জ্যাতি ফিরে পান ৮হাজার ৭শ ৯৮জন। দৈনন্দিন অপারেশন করা হয়েছে ছানি অপারেশন ৩৭হাজার ৬শ ৬৮জন, নালি অপারেশন ৪হাজার ৯৭৩জন, চোখের মাংস বৃদ্ধির অপারেশন ২হাজার ৬২৮জন, গ্লোকোমার ২হাজার ৮৫২জন, নেত্রনালির ২হাজার ৯৪৮জন, চোখে পাথর সংযোজন ৬১২জন, চোখের পাতার অপারেশন ৬৮৯জন, গুটি অপারেশন ৬৯৭জন, টিউমার অপারেশন ৯৬৭জন, টেরা চোখ অপারেশন ১৫৮জন।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ একাডেমী অফ অর্থালোমোলজি ও বাংলাদেশ ইউবিয়া সোসাইটি’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। নিজগ্রামে তার পিতা আব্দুল ওয়াহেদ মেমোরিয়াল নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ডা. মাহমুদা খাতুন হাফেজিয়া মাদরাসার সভাপতিসহ একাধিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদির জানান, মানুষের জন্য, মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও বেঁচে থাকার তাগিদ অনুভব করি। সেবাব্রত নিয়ে এ পেশায় এসেছিলাম। সেই পেশায় লাখো লাখো মানুষকে সেবা দিতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করি। এ সেবা ও মানুষের কল্যাণে যেন কাটিয়ে যেতে পারি তার জন্য সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী।